আশাকরি ভালো আছেন । বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পার্বত্য জেলা হলো রাঙামাটি । ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে রাঙামাটি খুবই পরিচিত । রাঙ্গামাটির পাহাড়, নদী তৈরি করেছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ।
সাজের ভ্যালিতে যাওয়ার ইচ্ছা আমাদের সকলের । দেশের প্রায় প্রতিটা মানুষেরই সাজেক ভ্যালিতে যাওয়া ইচ্ছা পোষণ করে । আর সবচেয়ে জনপ্রিয় এই সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলাতে অবস্থিত ।
তাহলে আসুন আর সময় নষ্ট না করে রাঙ্গামাটি জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জেনে নেই ।
রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সাজেক ভ্যালি
সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের খুবই বিখ্যাত একটি পর্যটন স্থল।
এটি রাঙ্গামাটি জেলার উত্তরে বাংলাদেশ – ভারত সীমান্তে ( মিজোরাম সীমান্তে ) অবস্থিত । সাজেক ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন । এর আয়তন ৭০২ বর্গ মাইল ।
এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু, এর পূর্ব পার্শ্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য এবং পশ্চিম পার্শ্বে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা অবস্থিত ।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা অবস্থিত। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতার সাজেক ভ্যালি যেন এক প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এরই মধ্যে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে নৈস্বর্গিক সাজেক ভ্যালি ভূস্বর্গ ।
কাপ্তাই লেক
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটি জেলার একটি কৃত্রিম হ্রদ হলো কাপ্তাই হ্রদ । কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার জন্য ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করা হল । ফলে রাঙামাটি জেলার ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে যায় এবং এই হ্রদের সৃষ্টি হয় ।
ঝুলন্ত সেতু
ঝুলন্ত সেতু বা সাসপেনশন সেতু এমন একটি সেতু যার ভার বহনের অংশ দুই পাশে স্তম্ভের মধ্যে ঝুলন্ত ধাতব মোটা তারের সঙ্গে উল্লম্ব সাসপেনশন তারের নিচে নিক্ষিপ্ত হয় । আঠারো শতকের প্রথম দিকে এই ধরনের প্রথম সেতু নির্মাণ করা হয় ।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের উপরে এই রকম একটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে ।
রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান রাজবন বিহার
রাঙামাটি শহরের অদূরেই অবস্থিত রাজবন বিহার বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৃহত্তম বিহার । ১৯৭৭ সালে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বনভান্তে লংগদু এলাকা থেকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাঙামাটি আসেন । বনভান্তে এবং তার শিষ্যদের বসবাসের জন্য ভক্ত বৃন্দ এই বিহারটি নির্মাণ করেন ।
শুভলং ঝর্ণা
বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলায় শুভলং ঝর্ণা অবস্থিত। রাঙ্গামাটি সদর হতে শুভলং ঝর্ণার দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার । শুকনো মৌসুমে শুভলং ঝর্নায় খুবই অল্প পরিমাণ পানি থাকে । বর্ষা কালে শুভলং ঝর্ণার পানি প্রায় তিনশত ফুট উঁচু থেকে নিচে আছড়ে পড়ে কাপ্তাই হ্রদের জলে গিয়ে মেশে।
হাজাছড়া ঝর্ণা
রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট এলাকায় হাজাছড়া ঝর্ণা অবস্থিত। মূল রাস্তা হতে ১৫ মিনিট গিরিপথ ধরে হেঁটে গেলে পৌঁছানো যায় এই ঝর্ণার পাদদেশে । ঝর্ণার ঠান্ডা পানি আর সবুজেঘেরা গিরিপথ পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । শীতকালে এখানকার পানির প্রবাহ কমে যায় ।
হ্যাপি আইল্যান্ড
শিশু কিশোরদের বিনোদন কেন্দ্র হ্যাপী আইসল্যান্ড রাঙ্গামাটি সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাঙ্গামাটি আরণ্যক রির্সোটের পাশে কাপ্তাই হ্রদের পাশে ৪৫ শতক জায়গার উপর তৈরী হয়েছে । এই হ্যাপী আইসল্যান্ডে শিশুদের জন্য রয়েছে সুইমিং পুল, পানির রাইড সহ আরো অনেক ধরনের খেলাধুলার জিনিস । এছাড়াও এখানে রয়েছে বিনোদনের জন্য অসংখ্য সামগ্রী ।
ঢাকার ওয়াটার ল্যান্ডের যে আনন্দ উপভোগ করা যায়, রাঙ্গামাটির হ্যাপী আইস ল্যান্ডে শিশুরা ঠিক সেই বিনোদন পাবে । এছাড়াও এখানে বিনোদনের ব্যবস্থা ছাড়াও রয়েছে পিকনিকের ব্যবস্থা।
হ্যাপি আইল্যান্ড এ প্রবেশ ফি মাত্র ৩০০ টাকা ।
রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান পলওয়েল পার্ক
পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজ ডিসি বাংলো রোডের পাশে কাপ্তাই লেকের ঠিক কোল ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে ।যা রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ এর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে। সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় এটি হয়ে উঠেছে রাঙ্গামাটি জেলার অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র ।
এখানে রয়েছে বৈচিত্রময় ল্যান্ডস্কেপ, অভিনব নির্মাণশৈলী ও নান্দ্যনিক বসার স্থান । এসব কিছুই পলওয়েল পার্কটির মধ্যে এনেছে ভিন্ন ধরনের এক মাত্রা ।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ার চরে শহীদ বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি অবস্থিত। তার বীরত্ব, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য তাঁকে সর্ব্বোচ সম্মান বীর শ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয় ।১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস ( পরবর্তীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ) সিপাহি মুন্সি আব্দুর রউফকে তার সন্মানার্থে ল্যান্স নায়েক পদে মরণোত্তর পদোন্নতি প্রদান করে ।
কমলক ঝর্ণা
কমলক ঝর্ণা খাগড়াছড়ি জেলার সাজেকে অবস্থিত একটি ঝর্ণা । এই ঝর্ণাটি পিদাম তৈসা ঝর্ণা অথবা সিকাম তৈসা নামেও অনেকের কাছে পরিচিত।
মুপ্পোছড়া ঝর্ণা
রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বাঙ্গালকাটা নামক জায়গায় অবস্থিত মুপ্পোছড়া ঝর্ণা । মুপ্পোছড়া ঝর্ণাটি একটি মাত্র ঝরা হলেও প্রস্থের দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় ঝর্ণা ।
লেক ভিউ আইল্যান্ড
২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই লেকের পাশে লেক ভিউ আইল্যান্ড নামক পর্যটন কেন্দ্র তৈরি করেছে । লেক ভিউ আইল্যান্ডে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার পার্ক, হিলটপ সুইমিং পুল, দৃষ্টিনন্দন কটেজ, নীলকৌড়ি বজরা এবং মাছ ধরার ব্যবস্থা ।
শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আমরা রাঙামাটির বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করলাম । আশাকরি আপনি রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন ।
কোন প্রকার সমস্যা বা তথ্যের জন্য কমেন্ট করুন । এরকম নতুন নতুন আর্টিকেল পড়তে আমাদের ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করুন এবং অন্যান্য পোস্ট গুলো পড়ুন ।