দিনাজপুর বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত একটি জেলা । এখানে রয়েছে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ সহ আরো অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দিনাজপুর লিচু, আম এবং চালের জন্য বিখ্যাত । এটি একটি অত্যন্ত প্রাচীন ও সমৃদ্ধ নগরী ।
আজকে আমরা দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছু কথা বলব। তাহলে আসুন আর সময় নষ্ট না করে দেখে নেই দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান।
গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ ঈদগাহ ময়দান বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত । এর নাম গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ ময়দান। ২০২২ সালের ঈদুল ফিতরের নামাজে একসাথে প্রায় ৬ লক্ষ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন।
এই ঈদগাহের স্থপনা গুলোর মধ্যে রয়েছে মেহরাব, মিনার । মেহরাবের উচ্চতা ৫৫ ফুট । এখানে রয়েছে ৫২ টি গম্বুজ , দুটি মিনার । মিনার গুলোর উচ্চতা ৬০ ফুট । দুইটি মিনারের মাঝের গেট দুটি ৪৭ ফুট চওড়া ।
প্রতিটি মিনারে আছে সিরামিক টাইলস এবং বৈদ্যুতিক বাতি। যা রাতের অন্ধকারে এই ঈদগাহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। ঈদগাহ মাঝের দুইপাশে রয়েছে অযুর ব্যবস্থা ।
এই স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ইরাকে অবস্থিত মসজিদে নববি, কুয়েত, ভারত, ইন্দোনেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশের স্থাপনার ছোয়া।
এই ঈদগাহ মাঠের আয়তন ২২ একর । কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের আয়তন ৭ একর । অর্থাৎ এটি শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে চেয়েও প্রায় ৩ গুন বড় ।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান কান্তজীর মন্দির
কান্তজীর মন্দির নামে পরিচিত হলেও এটির আসল নাম কান্তজিউ মন্দির । এছাড়াও এটি কান্তজী মন্দির বা কান্তনগর মন্দির নামেও পরিচিত। এর অবস্থান দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলায়। এটি কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত ।
২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন এই মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছিল ।
এখানে যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে আসতে হবে দিনাজপুরের দশমাইল নামক স্থানে । যা দিনাজপুর শহর থেকে উত্তরে অবস্থিত । সেখান থেকে অটোতে করে যেতে পারবেন ।
Don’t miss, রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ
রামসাগর দীঘি
দিনাজপুর জেলার তাজপুর গ্রামে মানুষের সৃষ্ট একটি বৃহৎ দীঘি । দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দীঘি বলে বিবেচনা করা হয়।
পাশের সমতল ভূমি সহ সম্পূর্ন রামসাগর এর আয়তন ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪৮২ বর্গমিটার । এর দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার , প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার এবং পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার।
দীঘিটির পশ্চিম তীরে একটি ঘাট ছিল । যা এখন প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত । বেলেপাথর স্ল্যাব দ্বারা এই ঘাটতি তৈরি করা হয়েছিল ।
দিনাজপুর রাজবাড়ী
দিনাজপুর জেলার ইতিহাস ও ঐশ্বর্যের প্রতীক হলো দিনাজপুর রাজবাড়ী । জমিদারী প্রথা ১৯৫১ সালে বিলুপ্তি হলে এই রাজবাড়ীর জৌলুশ কমতে থাকে । রাজবাড়ীর সর্বশেষ জমিদার ছিলেন জমিদার জগদীশনাথ । যিনি সর্বশেষ ১৯৬২ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন ।
এই রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে রয়েছে আয়না মহল, রাণী মহল, লক্ষ্মী ঘর, আটচালা ঘর , ঠাকুর বাড়ী, কালীয়া জিউ মন্দির, আতুর ঘর,কুমার মহল, রাণী পুকুর, চাঁপা তলার দিঘী ইত্যাদি । এই জাদুঘর থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ঢাকার জাতীয় জাদুঘর এবং দিনাজপুর মিউজিয়ামে জাদুঘরে সংরক্ষন করা রয়েছে।
দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান নয়াবাদ মসজিদ
নয়াবাদ মসজিদ দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত । এটি কান্তজীর মন্দির থেকে মাত্র ২ কিলোমিটারের চেয়েও কম দূরত্বে অবস্থিত । এটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত একটি স্থাপনা।
মসজিদটির আয়তন ১.১৫ বিঘা অর্থাৎ এটি ১.১৫ বিঘা জমির উপরে অবস্থিত। তবে মসজিদটির আয়তন অনেকটাই ছোট । এই মসজিদের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ঢেপা নদী।
এই মসজিদে তিনটি গম্বুজ এবং চারটি অষ্টভুজ মিনার রয়েছে । মসজিদের পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিম্বর রয়েছে । যেগুলো মসজিদের তিনটি দরজা ববাবর তৈরি করা হয়েছে ।
মসজিদের বেশিরভাগ টেরাকেটা বা পোড়ামাটির কারুকার্য ব্যবহার করা হয়েছিল সেগুলোর বেশিরভাগই এখন নেই । যেগুলো আছে তার বেশিরভাগই অরক্ষিত । এখানে এখন ১০৪ টি টেরাকোটা রয়েছে ।
এই মসজিদের পাশে এটি কবর রয়েছে । ধারণা করা হয় এটি, এই মসজিদের কোন নির্মাণ শ্রমিক এর কবর।
Don’t miss, সীতাকুণ্ড দর্শনীয় স্থান সমূহ
স্বপ্নপুরী স্পট
দিনাজপুরের কৃত্রিম একটি বিনোদন পার্ক হলো স্বপ্নপুরী । এটি দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর কাছেই অবস্থিত।
L
বিভিন্ন রাইডস, বাগান, হ্রদ, ‘রংধনু’ আর্ট গ্যালারি, ‘মহা মায়া ইন্দ্রজাল’ নামে জাদুর গ্যালারী, চিড়িয়াখানা,ঘোড়ারগাড়ী, রেস্ট হাউজ সহ আরো অনেক কিছু রয়েছে ।
দীপশিখা মেটি স্কুল
দীপশিখা মেটি স্কুল দিনাজপুর জেলার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । যেখানে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করানো হয় ।
এই জেলার বিরল উপজেলার রুদ্রাপুর গ্রামে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় ২০০৫ সালে এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয় । এটি মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ।
জার্মানির শান্তি নামক একটি সংস্থার অর্থায়নে অস্ট্রিয়ার লিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দীপশিখা প্রকল্পের শিক্ষার্থীরা এটি নির্মাণের সাথে যুক্ত ছিলেন । এর নিকশা করেছেন জার্মান স্থপতি অ্যানা হেরিঙ্গার ও এইকে রোওয়ার্গ ।
এটি তৈরি করা হয়েছে দড়ি, খড়, কাঠ, টিন, বালু ও বাঁশ, রড,মাটি, খড়, ইট ও সিমেন্ট । এর দেয়াল তৈরি করা হয়েছে মাটি ও খড় মেশানো কাদা দিয়ে । এর দেয়ালে দেওয়া হয়েছে আর্দ্রতারোধক।
প্রথম তলার ছাদ তৈরি করা হয়েছে বাঁশ বিছিয়ে ও তার উপর চাটাই দিয়ে মাটির আবরণ দেওয়া হয়েছে । দোতলায় বাঁশের সাথে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে । এবং বৃষ্টির পানি রোধে ব্যবহার করা হয়েছে টিন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
দিনাজপুর শিক্ষানগরী হওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো এই বিশ্বিদ্যালয়টি । ঢাকা – দিনাজপুর মহাসড়কের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস অবস্থিত । দিনাজপুর শহর থেকে ১০ কিমি দূরে বাঁশের হাট নামক স্থানে এটি অবস্থিত । এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সবুজ গাছপালায় ঘেরা ।
এখানে দেখার মত বিষয়গুলো হলো বড় বড় একাডেমিক ভবন, ছাত্র – ছাত্রীদের থাকার হল । এছাড়াও রয়েছে খুবই ছোট আকারের চিড়িয়াখানা, ১ টি শিশুপার্ক ।
শেষ কথা
আশা করি দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আর্টিকেলটি পরে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এরকম আরো নতুন নতুন আর্টিকেল পড়তে আমাদের ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করুন ।
1 thought on “দিনাজপুরের দর্শনীয় স্থান | Tourist spots in Dinajpur”