বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয় চট্টগ্রামকে । এটি একাধারে দেশের দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় শহর ।
এখানে রয়েছে সমুদ্র ঘেরা এলাকা নদী এবং পাহাড় । যা এই এলাকাকে অনেক সুন্দর করে তুলেছে । একে প্রাচ্যের রানী হিসেবে অভিহিত করা হয় ।
এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দর্শনীয় স্থান । আসুন আজকে আমরা চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানব ।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন নগর । এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত । চট্টগ্রাম শহর হতে যার দুরুত্ব মাত্র 14 কিলোমিটার ।
পতেঙ্গা সমুদ্রসৈ কর্তৃক প্রস্থের বেশি বড় নয় । ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় । পরে ভাঙ্গন রোধে এখানে কংক্রিটের দেয়াল এবং অনেক পাথর রাখা হয়েছে ।
Don’t miss, শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান
এখানে রয়েছে বিভিন্ন স্ট্রীট ফুডের দোকান । যেখানে সিফুড কিনতে পাওয়া যায় । আবার সমুদ্রের স্পিডবোট নিয়ে ঘোরার সুযোগ রয়েছে । এছাড়াও রয়েছে ঘোড়ায় চড়ার ব্যবস্থা । কেনাকাটা করার জন্য রয়েছে বার্মিজ মার্কেট ।
চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান ফয়েজ লেক
ফয়েজ লেক বা ফরেজ হ্রদ ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক খনন করা একটি হ্রদ । এটি চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে অবস্থিত । আগে এটি পাহাড়তলী লেক নামেই পরিচিত ছিল ।
রেল কলোনিতে পানি পৌঁছনোর জন্য এটি খনন করা হলেও বর্তমানে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । এর আয়তন ৩৩৬ একক এবং এটি দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত্যকায় আড়াআড়ি বাঁধের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে ।
এর পাশেই চট্টগ্রামের সবচেয়ে উচু ‘বাটালি পাহাড়’ অবস্থিত । এখানে রয়েছে ফয়েজ লেক কনকর্ড নামের একটি বিনোদন উদ্যান । যেখানে নৌকাভ্রমণ, রেস্তোরাঁ, ট্র্যাকিং, কনসার্ট, বিরল প্রজাতির পাখি, হরিণ ইত্যাদি দেখার ব্যবস্থা ।
ওয়ার সিমেট্রি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈন্যদের সমাধিস্থ করার ফলে চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি তৈরি হয় । এটির আসল নাম কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি যা চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি নামে পরিচিত । এটি ট্টগ্রাম কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের একটি সৌধ ।
শুরুতে এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিহত প্রায় ৪০০ জন সৈনিকের কবর ছিল । পরে এখানে সর্বমোট ৭৩১ জনের কবর দেওয়া হয় । সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং হাসপাতালে সুবিধার জন্য এখানে মিত্রবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয় ।
ভাটিয়ারী লেক
চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীর পাহাড়ের উপর অবস্থিত অসাধারণ এক নৈস্বর্গিক লেক । যার নামে ভাটিয়ারী লেক । এটি ভাটিয়ারী গলফ ক্লাবের পাশেই অবস্থিত ।
এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত । তাই এলাকাটি খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই উন্নত ।
পাহাড়ের পাদদেশে জমে থাকা পানি থেকে এই লেকের সৃষ্টি । লেকটি বেশি চওড়া না হলেও অনেকটা লম্বা এবং সাপের মত আকাবাকা ।
এখানে রয়েছে স্পীড বোট, প্যাডেল বোটে করে ঘুরার সুবিধা । আরো রয়েছে হ্রদে মাছ ধরার ব্যবস্থা । নির্দিষ্ট ফি দিয়ে হ্রদের পানিতে মাছ ধরা যায় ।
ডিসি হিল
ডিসি হিল বা ডিসির পাহাড় চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত অন্যতম নান্দনিক স্থান যার বর্তমান আনুষ্ঠানিক নাম নজরুল চত্বর।[১] এই পাহাড়ের শীর্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সরকারী বাসভবন অবস্থিত। পাহাড়টির চারিদিকে অনেক সুউচ্চ গাছ রয়েছে।
এই স্থানটির বর্তমান আনুষ্ঠানিক নাম হচ্ছে নজরুল চিত্তর । এই নামকরণ করার কারণ এখানে কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অবসর সময় কাটাতে আসতেন ।
এই পাহাড়ের শীর্ষে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সরকারী বাসভবন ।
পাহাড়টির আশেপাশে রয়েছে অনেক উঁচু গাছ প্রথমে এটিকে পার্ক তৈরি করার কথা থাকলেও পরে আর করা হয়নি ।
এখানে পহেলা বৈশাখ পালন ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে । এছাড়াও এখানে অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
বাটালি হিল
বটল হিল বা বোটালি পাহাড় চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় । এটি অনেকের কাছে জিলাপি পাহাড় নামেও পরিচিত । কেননা এই পাহাড়ে ওঠার পথটি জিলাপির প্যাচ এর মত আঁকাবাঁকা । এই পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুট ।
এই পাহাড়ের চূড়ায় থেকে চট্টগ্রাম শহর এর বেশিরভাগ অংশ এবং বঙ্গোপসাগর দেখা যায় । এছাড়াও এই পাহাড়ের চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগরে সূর্যাস্তের খুবই সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় ।
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার
চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত বায়েজিদ বোস্তামির মাজার । এখানে চট্টগ্রামের আশার বিভিন্ন পর্যটক ঘোরার জন্য আসেন । এখানে ১৮৩১ সালে প্রথম সমাধির অবয়বটি আবিষ্কার করা হয় ।
পরের এটি আধুনিক কাঠামো দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা হয় । এই পাহাড়ের পাদদেশে তিন নম্বর বিশিষ্ট নির্মাণ করা হয় । ধারণা করা হয় এটি আওরঙ্গজেবের আমলে নির্মিত ।
বাজারের পাদদেশে একটি বিশাল আকার পুকুর রয়েছে । এখানে বায়োজিদ বোস্তামী কাছিম এবং গজার মাছ রয়েছে । বায়োজিদ বোস্তামীর কাছিম আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত বিরল প্রজাতি । এটি এই স্থান ছাড়া আর অন্য কোথাও দেখা যায় না ।
চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান বাঁশখালী ইকোপার্ক
এটি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় শীলকূপ ইউনিয়ন এ বামেরছড়া ও ডানেরছড়া এলাকার অবস্থিত একটি পার্ক । এটি উঁচু নিচু পাহাড়, স্বচ্ছ পানি এবং বনাঞ্চল নিয়ে তৈরি ।
এখানে রয়েছে হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাস । এসব উদ্ভিদ এবং প্রাণীকে চেনার জন্য তৈরি করা হয়েছে তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র ।
জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর । এটি বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবন প্রণালী, পারস্পরিক বোঝাপড়া লালনের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এখানে উপজাতি সমূহের গোষ্ঠী ও ইতিহাস সমন্বিত উপকরণ প্রদর্শন করা হয় ।
এশিয়া মহাদেশে মাত্র দুইটি জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর রয়েছে । যার একটি চট্টগ্রামে এবং অন্যটি জাপানি অবস্থিত ।
জাদুঘরটি কেন্দ্রীয় হলঘর সহ পাঁচটি ভাগে বিভক্ত । এখানে রয়েছে ১১ টি কক্ষ । এখানে ২৯ টি নেতাত্ত্বিক জাতির জীবনধারা প্রদর্শন করা হয় ।
চাঁদপুর বেলগাঁও চা বাগান / বাঁশখালী চা বাগান
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে চাঁদপুর বেলগাও চা বাগান বা বাঁশখালী চা বাগান অবস্থিত । এখানে প্রায় ৭০০ একর জায়গা জুড়ে চা বাগান, চা পাতা সংরক্ষণ এবং বিক্রয় এর কাজ চলে ।
মহুরি প্রজেক্ট
দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ শেষ প্রকল্প হল মুহুরী প্রজেক্ট । এখানে দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অবস্থিত । এছাড়াও এটি এখন মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ।
এছাড়া এটি একটি বিনোদন কেন্দ্র এবং পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । বিশেষ করে শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসে ।
এখানে রয়েছে জলরাশি, বন, মাছের অভয়ারণ্য, নানা প্রজাতির পাখি, পাথর দিয়ে বাঁধানো বাঁধ এবং দুর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা ইত্যাদি ।
চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান খৈইয়াছরা ঝরনা
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় পাহাড়ের অবস্থিত একটি ঝর্ণা হলো খৈয়াছড়া ঝর্ণা ।
এখানে মোট ৯টি বড় বড় ধাপ এবং অনেকগুলো ছোট ধাপ রয়েছে ।
এটি ছাড়াও মীরসরাইয়ে অবস্থিত অন্যান্য জলপ্রপাত হলো,
- কমলদহ ঝর্ণা
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- সহস্রধারা ঝর্ণা
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- খৈয়াছড়া ঝর্ণা
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
চট্টগ্রাম জেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে রয়েছে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত । এটি বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে মাত্র ১৫ মিনিট হাঁটা পথে অবস্থিত ।
এই সমুদ্রের সৈকতের মূল আকর্ষণ হল আপনি পায়ে হেঁটে সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতর সমুদ্রে প্রবেশ করতে পারবেন । এখানে উপভোগ করতে পারবেন বড় বড় সমুদ্রের ঢেউ ।
এখানে আপনি ঘুরে বেড়াতে পারবেন এবং সমুদ্র সৌন্দর্যতা অনুভব করতে পারবেন ।
এখানে রয়েছে লম্বা ঝাউ গাছের বাগান এবং বালির বড় বড় মাঠ ।
পারকি সমুদ্র সৈকত
এটি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত প্রায় ১৪ কিলোমিটার লম্বা সমুদ্র সৈকত । এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত ।
এখান থেকে দেখা যায় বিভিন্ন ছোট বড় পাহাড় । আরো দেখা যায় কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজ । রয়েছে ঝাউ গাছ সহ বিভিন্ন ধরনের গাছ ইত্যাদি ।
সন্দ্বীপ
চট্টগ্রাম জেলার একটি দ্বীপের নাম হলো সন্দীপ । এটি মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত এবং সন্দ্বীপ চ্যানেল দ্বারা চট্টগ্রাম থেকে আলাদা হয়ে আছে । এখানে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ বসবাস করে ।
আমাদের শেষ কথা
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পেয়েছেন ।
এরকম ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন নতুন নতুন আর্টিকেল করতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন ।
কোন সমস্যা হলে কিংবা কোন কিছু জানার প্রয়োজন হলে কমেন্টের মাধ্যমে জানান ।