শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান | Tourist spots in Srimangal

Rate this post

শ্রীমঙ্গল বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় উপজেলা । এটি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত । এখানে রয়েছে কিছু পাহাড় এবং টিলা এর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে ।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করব ।

Don’t miss, গাজীপুরের দর্শনীয় স্থান সমূহ

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান সমূহ 

আসুন এবারে দর্শনীয় স্থানগুলো দেখি,

নিসর্গ ইকো রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গল এর রাধানগর এলাকায় ভানুগাছ রোড়ে অবস্থিত নিসর্গ ইকো রিসোর্ট , একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি । 

এখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের এসি রুম এবং ইকো কটেজ । এগুলোতে থেকে পাওয়া যায় প্রকৃতির আলাদা রোমাঞ্চ । 

রিসোর্টটির ভেতর এবং বাহির দুই অংশই দেখতে খবই সুন্দর । ভেতরের অংশে রয়েছে মনোমুগ্ধকর স্থাপনা । ভেতরে আরো রয়েছে অসংখ্য ফল ও ফুলের গাছ । এই সুন্দর সুন্দর ফল ও ফুলের গাছ দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।  

এগুলো ছাড়াও এখানে রয়েছে শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা, মিটিং, প্রশিক্ষণ এবং বৈঠকের ব্যবস্থা । আরো রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা । সবশেষে এই রিসোর্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অনেক উন্নতমানের ।

দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা

মৌলভীবাজার জেলার গিয়াসনগরে দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা অবস্থিত । এই হোটেলটি World Luxury Hotel Awards পেয়েছে । 

এখানে রয়েছে খুবই সুন্দর লেক । পাহাড়ের উপরে সবুজ গাছপালা বেষ্টিত এই রিসোর্ট সময় কাটানোর জন্য খুবই আদর্শ স্থান । 

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান লাসুবন গিরিখাত

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত লাসুবন গিরিখাত । এটি একটি প্রাচীন গিরিখাত ।

এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তের কাছে সিন্দুরখান ইউনিয়নের ঘন জঙ্গলবেষ্ঠিত পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত । 

এই গিরিখাত গুলো ১ কিলোমিটার বা এর চেয়ে কম ।

গিরিখাত গুলি ধরে নিচে নামলে অনেক সময় হঠাৎ যদি উপর থেকে পানি নামে তখন আর উঠার পথ থাকে না। তাই এখানে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে । কোথাও কোথাও আরো রয়েছে পাথরের দেওয়াল।  যেখানে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। 

গিরিখাত এলাকাটি স্থানীয় নাহার খাসিয়া পুঞ্জির অভ্যন্তরে অবস্থিত। লাংগুলিয়া নামক একটি পাহাড়ি ছড়া ধরে পুরো গিরিখাতটি ঘুরা যায় । এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বাংলাদেশে নেমে এসেছে।  

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা

শ্রীমঙ্গলের ফাইল হাওরের কাছাকাছি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে ১.৮০ জায়গায় জুড়ে শ্রীমঙ্গলের একটি সমৃদ্ধ ও একমাত্র চিড়িয়াখানা সীতেশ বাবু চিড়িয়াখানা অবস্থিত । এটি রুপস্পুর মৎস্য খামার বাড়ির কাছে অবস্থিত। 

চিড়িয়াখানাটি শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত হওয়ায় দেশ বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক এখানে ভিড় করেন । এটি মানুষের কাছে শিক্ষা সহায়ক ক্ষেত্র হিসেবেও পরিচিত ।

এখানে সংরক্ষিত বিভিন্ন ধরনের বিরল প্রজাতির প্রাণীর উপরে গবেষণা পরিচালনা করা হয় । একটি শাকিনী জঙ্গলে অবমুক্ত করতে চাইলে অনেকেই তা করতে বিরত করেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চিড়িয়াখানায় সংরক্ষণ করা হয় । 

চা জাদুঘর

মৌলভীবাজার এ শ্রীমঙ্গল উপজেলা চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত । এখানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র চা জাদুঘর । এই জাদুঘরের শত বছরের চা বাগানের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে । 

এছাড়াও চায়ের বিভিন্ন ধরনের জাত, চা চাষের ইতিহাস এবং নানা ধরনের উপাদান সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে । 

২০০৯ সালে শ্রীমঙ্গলের টি বোর্ডের উদ্যোগে ভর্তি তৈরি করা হয়েছে ।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কমলগঞ্জ যাওয়ার পথে যে সড়কটি গিয়েছে সেটি ধরে দুই কিলোমিটার গেলেই চা জাদুঘরটি অবস্থিত ।

বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান এর স্মরণে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে । তিনি ২৮ শে অক্টোবর ১৯৭১ সালে যুদ্ধরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ।  

তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সিপাহী ছিলেন।  তিনি পাকিস্তানিদের একটি পরিখা দখল করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন । 

তার আত্মত্যাগের কয়েকদিন পরে প্রচন্ড লড়াইয়ের ফলে মুক্তিযোদ্ধারা ধলই সীমান্ত পাড়ি দখল করে। তার অসীম সাহসিকতার জন্য তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয় ।

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট

হানিমুনের জন্য লাউয়াছড়া লেমন গার্ডেন রিসটটি খুবই জনপ্রিয় । এটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা অবস্থিত । 

এটি একটি পাহাড়ের টিলার উপরে অবস্থিত । পরিবারের সদস্য নিয়ে এ পাহাড়ের রাত্রিযাপন করা একটি অনবদ্যকর অভিজ্ঞতা। 

যারা নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি হল স্বর্গরাজ্য ।

নীলকণ্ঠ টি কেবিনের সাতরঙের চা

সাত রং চায়ের এই স্বাদ নিতে অনেক চা প্রেমীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রীমঙ্গলে ছুটে আসেন ।  

সাত রঙের চায়ের প্রতিটা স্তরে স্তরে রয়েছে আলাদা আলাদা স্বাদ । মিষ্টি, ঝাঁঝালো সহ আলাদা আলাদা স্বাদের এই চা দেখতে রংধনুর মতো বর্ণীল । 

এইটা সিলেটের শ্রীমঙ্গল অবস্থিত নীলকন্ঠটি কেবিনে পাওয়া যায় । রমেশ রাম গৌর নামে এক ব্যক্তি হচ্ছেন এই চায়ের উদ্ভাবক ।

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান বাইক্কা বিল

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওড়ের পূর্বদিকের প্রায় ১০০ হেক্টর জমির উপরে বাইক্কা বিল অবস্থিত । 

২০০৩ সালের পহেলা জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় এই বিলটিকে মৎস্য সম্পদের অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণ করে ।  এখানে রয়েছে আইড়, কই, মেনি, ফলি, পাবদাসহ হরেক রকমের মাছ । 

এটি মাছ, পাখি সহ অন্যান্য প্রাণীর চমৎকার এবং নিরাপদ আবাসস্থল । এছাড়াও এখানে অনেক শাপলা এবং পদ্মফুল ফুটে । এখানে শীতে আগত পাখিদের দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ।

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান হলো একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল । এটি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জ উপজেলার অবস্থিত । 

বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ টি জাতীয় উদ্যান রয়েছে তার মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম ।

এটি শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এর আয়তন ১২৫০ হেক্টর । 

এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার গাছগাছালি ও পশুপাখি । যা এই বনকে করেছে আরো সুন্দর। এটি ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত।  এটি জীব বৈচিত্র্য পরিপূর্ন।  

হাম হাম ঝর্ণা

হাম হাম ঝর্না অনেকের কাছে হামহাম বা চিতা ঝর্ণা নামেও পরিচিত । এটি মৌলভীবাজার এর কমলগঞ্জের রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত । 

এটি একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত বা ঝর্না । এটি ২০১০ সালে গাইড শ্যামল দেববর্মার সাথে দুর্গম জঙ্গলে ঘেরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন ।

এটি ১৩৫ মতান্তরে ১৪৭ কিংবা ১৭০ ফুট উচু । ঝর্না টির উচ্চতার বিষয়ে কোন পরীক্ষিত বা প্রতিষ্ঠিত মত নেই । 

দেশের সবচেয়ে বড় ঝর্নার উচ্চতা প্রায় ১৬২ ফুট । কিন্তু অনেক গবেষক বলেছেন এর ব্যাপ্তি, মাধবকুণ্ডের ব্যাপ্তির প্রায় তিনগুণ বড় ।

শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থান মাধবপুর লেক

উচু উচু পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মাধবপুর লে ক খুবই অপূর্ব । এটি মৌলভীবাজার থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দক্ষিণ পাশে শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত । 

এই লেকের পানি খুবই ঝলমলে এবং গাছপালার ছায়ায় আচ্ছাদিত । লেখির মধ্যে রয়েছে শাপলা ফুল । এ লেকের পাড় ধরে আপনি যত এগিয়ে যাবেন।  আস্তে আস্তে তাতে আপনার মন চাঙ্গা হয়ে উঠবে । সবুজের সমারহে চারিতদিক খুবই সুন্দর । 

সবুজ পাহাড়, উচু উচু টিলা এবং সমতল চা বাগান মিলিয়ে এটি একটি মায়াবী নৈসর্গিক দৃশ্য । সবুজ পাহাড়, নীল আকাশ দেখলে মনে হবে আপনি অন্য কোন জগতে আছেন ।

শেষ কথা

আশা করি আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে একটু ধারণা পেয়েছেন । 

এইরকম নতুন নতুন আর্টিকেলের জন্য আমাদের এই ব্লগটি ঘুরে দেখতে পারেন । 

Leave a Comment