আশা করি ভালো আছেন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের এর কাছে সিলেট একটি জনপ্রিয় নাম । কেননা এই সিলেট জেলায় রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা বা দর্শনীয় স্থান ।
এসব স্থান বাংলাদেশের সকল মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় এবং আগ্রহের জায়গা ।
তাই বাংলাদেশের অনেক মানুষ সিলেটে ঘুরতে যেতে চায় । কিন্তু অনেকে হয়তো সিলেটের সকল দর্শনের স্থানের নাম জানেন না ।
তাই আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমি সিলেট জেলার ২০ টি দর্শনীয় স্থান এবং সেগুলো সম্পর্কে একটু আলোচনা করব।
আসুন দেখে নেই ছেলের সিলেট দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি ।
জাফলং
জাফলং, বাংলাদেশের সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তর্গত, একটি পর্যটনস্থল । জাফলং, সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে, ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষে খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ।
এখানে পাহাড় আর নদীর অপূর্ব সম্মিলন বলে এই এলাকা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত ।
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা অনেক উঁচু নিচু পাহাড় শ্রেণী দেখা যায় । এই পাহাড়গুলো থেকে নেমে আসা ঝর্ণা পর্যটকদের খুবই আকর্ষণ করে । এছাড়াও ভারতের ডাউকি বন্দরে ঝুলন্ত সেতু অন্যতম আকর্ষণের বস্তু ।
আলী আমজাদের ঘড়ি
এটি একটি ঘরের চূড়ায় অবস্থিত বিরাট আকারের ঘড়ি । ১৮৭৪ সালে স্থাপনা করা হয়েছে । সিলেট জেলার সদর উপজেলার সুরমা নদীর তীরে এই ঘড়িটি অবস্থিত ।
এই ঘড়িটির ডায়ামিটার ২ ফুট এবং এর কাঁটা গুলো দুই ফুট লম্বা ।
সিলেটের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার আলী আহমেদ তার ছেলের নামে নামকরণ করে ঘড়িটির প্রতিষ্ঠা করে ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা ঘড়িটির ক্ষতি করে এবং তা বন্ধ হয়ে যায় । তারপরে ঘড়িটি মেরামত করা হয় ।তারপরেও বেশ কয়েকবার ঘড়িটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং সর্বশেষ 2011 সাল থেকে সচল রয়েছে ।
ওসমানী জাদুঘর
মুক্তিযুদ্ধের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী পৈতৃক নিবাস পরিবর্তন করে এই জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে ।
এটি সিলেট জেলার কোতোয়ালি থানার ধোপা দিঘির পার এলাকায় অবস্থিত । যা সিলেট বিমানবন্দর থেকে ২ কিলোমিটার এবং সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।
স্বাধীনতা যুদ্ধে এএমজি ওসমানীর অসামান্য অবদানের স্মরণে এই জাদুঘরটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তৈরি করা হয়েছে ।
খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান
সিলেট জেলার অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান হলো খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান । ৬৭৮.৮০ হেক্টর জমি নিয়ে ২০০৬ সালের ১৩ এপ্রিল এ জাতীয় উদ্যান গঠিত হয় ।
এখানে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী । এখানে অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ প্রাণী তৈরি করেছে বৈচিত্র । এই বৈচিত্র দেখার জন্য মানুষ ছুটে আসে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে ।
এছাড়াও এটি শকুনদের জন্য নিরাপদ এলাকার বলে চিহ্নিত করা হয় ।
মাধবকুন্ড
ছেলের বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় মাধবকুণ্ড একটি খুবই জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা । এখানে রয়েছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত ।
প্রায় ২০০ ফুট উঁচু টিলা হতে পতিত হয় পাহাড়ি ঝরনার পানি । যা পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে । এছাড়াও এর আশেপাশে খাসিয়া নৃগোষ্ঠীদের বসবাস রয়েছে ।
রাতালগুল
সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত রাতালগুল বাংলাদেশের একটি অন্যতম মিঠাপানির জলাবন । একসময় একে বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির রাতালগুল হিসেবে মনে করা হতো।
বলে রাখা ভালো পৃথিবীতে মাত্র ২২টি মিঠা পানির জনগণ রয়েছে ।
এটি একটি বন্যপ্রাণীদের জন্য বিশেষ অভয়ারণ্য এবং বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত একটি জীববৈচিত্র সংরক্ষণের এলাকা ।
বিছানাকান্দি
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত বিছানাকান্দি, একটি পাথর কোয়ারী । যেখানে নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করা হয় ।
এখানে খাসিয়া পর্বতের বিভিন্ন স্তরে সেই এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে । খাসিয়া পর্বত থেকে নেমে আসা একটি ঝর্ণা এখানে হ্রদের সৃষ্টি করেছে । যা আবার পিয়াইন নদীর সাথে সংযুক্ত হয়েছে ।
এখানকার মূল পর্যটন আকর্ষণ হচ্ছে নদী । যা দেখার জন্য মানুষ অনেক দূর থেকে এখানে ছুটে আসে ।
মালনীছড়া চা বাগান
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন চা বাগান হল মালনীছড়া চা বাগান । এটি এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান ।
লট হার্ডসন ১৮৫৪ সালে ১৫০০ একর জমির উপর এটির প্রতিষ্ঠা করেন । এটি সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অল্প একটু দূরে অবস্থিত ।
লালাখাল
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি খুবই জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল লালাখাল।
এর পাশ দিয়ে শাড়ি গোয়াইন নদী প্রবাহিত হয়েছে । এই নদীতে রয়েছে অনেক বাক । নদীর পাড়ে অবস্থিত পাহাড়ি বন, চা বাগান এবং নানা প্রজাতির গাছপালাই মূলত মূল পর্যটন আকর্ষণ ।
হযরত শাহজালাল রাঃ মাজার
সিলেটের অন্যতম প্রধান দর্শনীয় স্থান হল হযরত শাহজালালের মাজার । এটি সিলেট সদরের ভিতরে এবং সিলেট শহরের মধ্যস্থলে জিরো পয়েন্টের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত ।
এটি হযরত শাহজালালের সমাধি সৌধ । এবং স্থানীয়ভাবে এলাকাটি দরগা এলাকা নামে পরিচিত ।
হযরত শাহপরান রাঃ মাজার
সিলেটের অন্যতম আধ্যাত্মিক স্থাপনের গুলোর মধ্যে একটি হল শাহ পরান এর মজার । ১৩৩ সালে ভারত উপহাদেশের আসা ধর্ম প্রচারক শাহজালালের অন্যতম সঙ্গী হল শাহ পরান ।
এটি সিলেট শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত । শাহজালালের দরগা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে শাহপরানের মাজার অবস্থিত । শাহজালালের মাজারের মতো এখানেও অনেক দর্শনার্থী আসে ।
শ্রীচৈতন্যদেব
সিলেটের গোপালগঞ্জ উপজেলা ভারতীয় উপমহাদেশের বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রবর্তক শ্রী চৈতন্যদেবের পৈতৃক নিবাস এর মন্দির অবস্থিত ।
যা হিন্দু ধর্ম অবলম্বীদের নিকট তীর্থস্থান ।
তামাবিল
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একটি এলাকা হলো তামাবিল । জাফলং যাবার ৪ কিলোমিটার আগে তামাবিল অবস্থিত । এখানে থেকে ভারতের অনেক পাহাড় ঝর্ণা এবং নদী দেখা যায় ।
তামাবিলের কাছের নদীরটির নামতাইরঙ্গল ।
ভোলাগঞ্জ
ভোলাগঞ্জ বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার একটি দর্শনীয় স্থান। সিলেট শহর হতে ৩৩ কিলোমিটার দূরবর্তী ও ভারতের চেরাপুঞ্জি সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের বৃহত্তর পাথর আহরণকারী স্থান এটি।
সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা একটি দর্শনীয় স্থান হল ভোলাগঞ্জ । ভারতের চেরাপুঞ্জি সীমান্ত এলাকায় এটি একটি বৃহৎ পাথর আহরণকারী স্থান ।
এখানে ধরনের অনেক পাথর, আবার পাহাড়ের মধ্যে রয়েছে মেঘ, ছোট বড় কয়েকটি ঝর্ণাও দেখা যায় ।
এখানকার দর্শনীয় স্থান গুলো,
- পাথর আহরণের দৃশ্য
- ভোলাগঞ্জ স্থল শুল্ক স্টেশন
- ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে
লোভাছড়া চা বাগান
কানাইঘাট উপজেলা লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় লোভাছড়া নদীর পাশে লোহাচড়া চা বাগান অবস্থিত ।
উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য পশ্চিমে বাংলাদেশের একটি সুন্দর পিকনিক স্পট ও লালাখাল চা বাগান অবস্থিত ।
ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা
ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা এশিয়া মহাদেশের সর্ব প্রথম সার কারখানা । এটি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম এবং সর্ববৃহৎ সার কারখানা ।
রায়েরগাও হাওর
অতি সিলেটের জানালাবাদ উপজেলায় অবস্থিত । বর্ষাকালে এটি পানিতে সম্পূর্ন পানিতে তলিয়ে যায় । এছাড়াও নানা ধরনের নৌকা এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে ।
পান্থমাই জলপ্রপাত
পান্থমাই বাংলাদেশ সিলেটের একটি গ্রামের নাম । এই গ্রামটি খুবই সুন্দর এবং এই গ্রাম থেকেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যে অবস্থিত পান্থমাই ঝর্ণা উপভোগ করা যায় ।
ঝর্ণাটি ভারতের মধ্যে পড়লেও বাংলাদেশ থেকেও এটি দেখা যায় ।
লক্ষণছড়া
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার মাধ্যমে ঝর্ণার কাছে অবস্থিত একটি দর্শনীয় স্থান লক্ষণছাড়া । ঝর্ণা থেকে খুব সহজে লক্ষণছাড়া ঘুরে আসা যায় ।
এখানে ভারতীয় ঝরনা থেকে সৃষ্ট সিড়ি পথ রয়েছে । বর্ষার সময় পানিতে এর সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যায় ।
ক্বীন ব্রীজ
সিলেট শহরের সুরমা নদীর উপর নির্মিত একটি লৌহ সেতু হলো ক্বীন ব্রীজ । একটি সিলেটের প্রবেশদ্বার ।
এটি অন্যতম দর্শনীয় ও ঐতিহ্যবাহী স্থান । সুরমা নদীর উপরে অবস্থিত এই ব্রিজটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
শেষ কথা
আশা করি সিলেটের বৃষ্টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছেন । আসলে বাংলাদেশের সুন্দর জেলাগুলোর মধ্যে সিলেট একটি ।
সিলেটের মধ্যে যেমন রয়েছে পাহাড় ঠিক তেমনি রয়েছে নদী এবং ঝর্ণা ।
পাহাড়, নদী এবং ঝর্ণা মিলিয়ে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে ।