আসসালামুয়ালাইকুম । আশা করি ভালো আছেন । বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত একটি জেলা হলো রাজশাহী। এখানে রয়েছে নানা ধরনের দর্শনীয় স্থান।
এই শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। এছাড়াও এখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, একটি রিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ।
আসুন আর সময় নষ্ট না করে দেখে নেই রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
বাঘা মসজিদ
১৫২৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় একটি মসজিদ তৈরি করেন । এটি জেলা সদর থেকে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত।
মসজিদটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৮/১০ ফুট ওপর অবস্থিত । মসজিদটি যেই জমির উপরে অবস্থিত, তার পরিমাণ প্রায় ২৫৬ বিঘা । মসজিদটির ফটকটির উপরে কারুকাজ করা ছিল । কিন্তু তা সময়ের সাথে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে ।
এই মসজিদের ১০ টি গম্বুজ রয়েছে এবং ভিতরে রয়েছে ছয়টি স্তম্ভ । এছাড়াও অত্যন্ত কারো কাজ করা মেহরাব রয়েছে । মসজিদটির মাঝখানে দরজার উপরে ফারসি ভাষায় লেখা শিলালিপি রয়েছে । মসজিদে ঢুকার জন্য চারটি প্রবেশ দ্বার রয়েছে ।
মসজিদটির দেওয়ালে অসংখ্য কারুকাজ করা টেরাকোটা রয়েছে । এছাড়াও এর সামনে একটি পুকুর রয়েছে । যেটি দর্শনার্থী মাত্রই আকর্ষন করে ।
রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান পুঠিয়া রাজবাড়ি
মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাসভবন হলো পুঠিয়া রাজবাড়ী । যা পাঁচআনি জমিদারবাড়ী নামেও পরিচিত । এটি রাজশাহীর অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য । এই রাজবাড়িটি ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে তৈরি করা হয়েছে । ১৮৯৫ সালে মহারানী নিজেই এই দ্বিতল রাজবাড়ীটি তৈরি করেন।
ভবনটির নির্মাণশৈলী অনেক উন্নত । এছাড়াও এর চারপাশে নিরাপত্তার জন্য পরিখা খনন করা করা হয়েছিল ।
পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশে পাশে ৬ বড় বড় পুকুর রয়েছে । সেগুলোর প্রত্যেকটির আয়তন প্রায় ৬ একর । এছাড়াও এখানে একটি বড় শিব মন্দির সহ ৬ টি মন্দির রয়েছে । প্রত্যেকটির দেয়ালে পোড়ামাটির কারুকাজ করা রয়েছে ।
এগুলো ছাড়াও এখানে রয়েছে স্নানের ঘাট, অন্দর মহল সহ আরো অনেক কিছু ।
Don’t miss, বরিশালের দর্শনীয় স্থান
পদ্মার পাড়
রাজশাহীতে পদ্মা নদীর ধার ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে সড়ক পথ । এই পথ রাজশাহীর বুলনপুর থেকে বড়কুঠি ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত । এই সড়ক দিয়ে হেঁটে পদ্মা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় ।
গ্রীষ্মে পদ্মা নদীর পানি শুকিয়ে যায় এবং বর্ষায় পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠে । প্রায় সব ঋতুতেই এই নদীকে ঘিরে মানুষের আনাগোনা থাকেই । যেকোন উৎসবের সময় এখানের ভির অনেক বেড়ে যায় । এছাড়াও এটি পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর
বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটির অন্যতম একটি অর্জন হলো বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর । এটি দেশের অন্যতম একটি সেরা জাদুঘর । বাংলার অমূল্য প্রত্নসম্পদ জনসম্মুখে প্রকার করার জন্য এই জাদুঘর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
এই জাদুঘর রাজশাহীর জিরোপয়েন্ট থেকে ১ কিলোমিটারের একটু কম পশ্চিমে অবস্থিত । সাধারণত অটো, রিক্সা এর মত যানবাহনে যাওয়া যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় । এটি বাংলাদেশের একমাত্র ডিজিটাল ক্যাম্পাস সম্পন্ন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ।
এটি ৬ জুলাই ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় । এখানে বর্তমানে প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। এর আয়তন প্রায় ৭৫৩ একর বা ৩০৪ হেক্টর।
এখানে ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৯ টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও ৫টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটউট রয়েছে । এখানে রয়েছে ছাত্রদের জন্য ১১টি এবং মেয়েদের জন্য রয়েছে ৬টি আবাসিক হল। এছাড়াও শিক্ষক এবং কর্মচারীদের জন্য কোয়াটার রয়েছে।
এখানে অবস্থিত শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা আমাদের দেশের প্রথম স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তাছাড়াও এখানে আরো রয়েছে সাবাস বাংলাদেশ ভাস্কর্য এবং গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার৷
বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এবং মহাসড়ক থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ।
এখানে যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে,
- রাবি শহীদ মিনার
- শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা
- দুটি মুরাল
- উন্মুক্ত মঞ্চ
উল্লেখ্য, এটি একটি ওয়াই ফাই জোন।
- সাবাশ বাংলাদেশ
- বিদ্যার্ঘ
- স্ফুলিঙ্গ
- সুবর্ণ জয়ন্তি টাওয়ার
- বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ
- শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক
- কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
শিশু পার্ক
রাজশাহী শহরের অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র হলো শহীদ জিয়া শিশু পার্ক । এর অবস্থান জেলা সদরের নওদাপাড়া বড় বনগ্রামে ।
এর আয়তন প্রায় ১২.২১ একর । এখানে রয়েছে ১৯ আইটেমের ৭০ টি গেম । এর মাঝে একটি হ্রদ রয়েছে এবং হ্রদের মাঝে একটি কৃত্রিম পাহাড় তৈরি করা হয়েছে। যা এই পার্কের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করেছে।
এই পার্ক থেকে বের হওয়ার গেট অক্টোপাস এর মত দেখতে ।
রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান হাওয়াখানা
ঐতিহাসিক পুঠিয়ার ১৭টি পুরকীতির একটি হলো চারআনি রাজার হওয়া খানা । এটি রাজশাহীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
একটি ১০ একর আয়তনের দিঘির মাঝে অবসর বিনোদনের জন্য এই ভবনটির নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটির নির্মাণশৈলী অনেক উন্নত। এর প্রথম তলাতি পানির নিচে অবস্থিত। যার মধ্যে কোন দরজা জানালা নেই।
পদ্মা গার্ডেন
পদ্মা গার্ডেন নামে পরিচিত হলেও এই পার্কের আসল নাম হলো ওডভার মুনক্সগার্ড পার্ক । এটি রাজশাহী সদরে অবস্থিত একটি উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র। এটি জিরোপয়েন্ট থেকে মাত্র ২ মিনিট হাঁটা পথে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।
এখানে বেশ কয়েকটি খাবার রেস্তোরা রয়েছে । সিটি কর্পোরেশন এখানে বেশ কয়েকটি সুন্দর স্থাপনা তৈর করেছে।
এছাড়াও এটি একটি ফ্রি ওয়াইফাই জোন। এখানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অনুষ্ঠান করার জন্য মুক্ত মঞ্চ রয়েছে ।
চিড়িয়াখানা
পদ্মা নদীর তীরে এক সময়ের রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ৩২.৭৬ একর জায়গায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা অবস্থিত । এর দূরত্ব রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৪.২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ।
এটি শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জাম সড়কের কাছে তৈরি করা হয়েছে তাই চিড়িয়াখানাটি শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা নামেও পরিচিত ।
নানা ধরনের ফুল, ফুল, গাছ, দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য, নান্দ্যনিক ব্রিজ সহ এখানে রয়েছে একটি ছোট্ট লেক। এছাড়াও এখানে রয়েছে নানা ধরনের পশু – পাখি ।
শেষ কথা
আশাকরি রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি কিছুটা হলেও রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন ।
এই রকম নতুন নতুন ভ্রমন সংক্রান্ত আর্টিকেল পড়তে আমাদের ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।