আসসালামু আলাইকুম আশা করি ভাল আছেন । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যস্ততম শহর হল ঢাকা । শুধু রাজধানী হিসেবে নয় এই শহরের ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রয়েছে ।
তাছাড়াও এই শহর ছিল একসময় বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত । এই শহরকে বলা হয় মসজিদের শহর । কেননা এখানে রয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মসজিদ ।
এখানে নানা ধরনের মসজিদ সহ অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা । মুঘল ইংরেজ সহ বর্তমান আমলের নানা ধরনের স্থাপত্য রয়েছে এখানে ।
এছাড়াও পুরান ঢাকা আরো নানা কারণে বিখ্যাত । আজকের এই পোস্টে আমরা পুরান ঢাকার ১৫ টি সবচেয়ে সুন্দর দর্শনীয় স্থানের নাম জানবো এবং এগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানবো ।
তাহলে আগে আসুন পুরান ঢাকা দর্শনীয় স্থানের নাম জেনে নেই ।
পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান
পুরান ঢাকার বিখ্যাত ১৫টি দর্শনীয় স্থান হলো,
- বাহাদুর শাহ পার্ক
- তারা মসজিদ
- বলধা গার্ডেন
- লালবাগ কেল্লা
- জিনজিরা প্রাসাদ
- রূপলাল হাউজ
- আহসান মঞ্জিল
- কার্জন হল
- বড় কাটরা
- ছোট কাটরা
- পরিবিবির মাজার
- রোজ গার্ডেন
- আর্মেনীয় গির্জা
- লালকুঠি / নর্থব্রুক হল
- ঢাকেশ্বরী মন্দির
আসুন এবারে এগুলো সম্পর্কে একটু আলোচনা করি ।
বাহাদুর শাহ পার্ক
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে শহীদ সকল সিপাহীদের উদ্দেশ্যে বাহাদুর শাহ জাফরের নামে এ পার্কের নামকরণ করা হয় । পূর্বে এর নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক । এই স্থানটি অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ।
পুরান ঢাকার সদরঘাটের সন্নিকটে লক্ষ্মীবাজারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণে এবং ঢাকা জেলা আদালতের দক্ষিণ পূর্বে বাহাদুর শাহ পার্ক অবস্থিত ।
তারা মসজিদ
সাদা মার্বেলের গম্বুজের উপর নীল রঙে তারাই খচিত এবং জাপানের রঙিন চিনি-টিকরি পদার্থ ব্যবহার করে তারা মসজিদ তৈরি । মির্জা গোলাম পীর (মির্জা আহমদ জান) মসজিদটি তৈরি করেন । এটি ঢাকার অন্যতম সুন্দর মসজিদ গুলোর একটি ।
মসজিদটি পূরণ ঢাকার আরমানিটোলার আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত ।
বলধা গার্ডেন
প্রচুর দুর্লভ জাতীয় উদ্ভিদ সম্বলিত বাংলাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ একটি গার্ডেন হলো বলধা গার্ডেন । গাজীপুর জেলার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী 1909 সালে বলদা গার্ডেনের সূচনা করেন । প্রায় ৩.৩৮ একর জায়গার উপর এটি অবস্থিত।
বলধা গার্ডেন ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত ।
লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত । এটি একটি অসমাপ্ত মুঘল কেল্লা ।
মুগল সুবেদার মোহাম্মদ আজম শাহ যিনি ছিলেন আওরঙ্গজেবের পুত্র 1678 সালে লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন । কিন্তু তিনি এটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেন নি ।
তারপর মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে পুনরায় এটির নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করেননি।
জিনজিরা প্রাসাদ
জিনজিরা প্রাসাদ বাংলা ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা । কারণ বাংলার দেশ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর তার মা,স্ত্রী, কন্যা, ঘাসেটি বেগম সবাইকে এখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল।
জিনজিরা প্রাসাদ বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে কয়েকশ গজের মধ্যেই অবস্থিত ।
রূপলাল হাউজ
ঢাকার জমিদার ও বণিকদের দ্বারা নির্মিত অভিনব স্থাপত্য শৈলীর ভবন হলো রূপলাল হাউজ ।
দুইটি অসম অংশ নিয়ে এটি গঠিত । প্রতিটি অংশে কিছুটা ভিন্ন স্থাপত্য রীতি দেখা যায় । এর ভিত্তিভূমি কিছুটা E অক্ষরের মতো । এ ভবনটির ছাদ নির্মাণ করা হয়েছিল ‘কোরিনথীয়’ রীতিতে এবং উপরে রয়েছে রেনেসাঁ যুগের কায়দায় তৈরি পেডিমেন্ট ।
রুপলাল হাউস পুরান ঢাকার শ্যামবাজার এলাকায় অবস্থিত ।
আহসান মঞ্জিল
ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কাচারী হিসেবে আহসান মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠা করা হয় । তবে এটি বর্তমানে একটি জাদুঘর । এর প্রতিষ্ঠাতা নবাব আব্দুল গনি ।
নবাব আব্দুল গনিতার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ এর নামে প্রাসাদটির নাম করণ করেন। ১৯৫৯ থেকে শুরু করে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত এটির নির্মাণ কাজ চলে ।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কারণ এখানেই ১৯০৬ সালে এক বৈঠকে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।
এটি পুরান ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ইসলামপুরের কুমারটুলীতে অবস্থিত ।
কার্জন হল
কার্জন হল ভবনটি ঢাকা কলেজের জন্য নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞান অণুষদের শ্রেনীকক্ষ ও পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । এটি একটি ঐতিহাসিক ভবন এবং পুরাকীর্তি ।
১৯০৪ সালে ভাইসরয় লর্ড জর্জ নথানিয়েল কার্জন এর ভিত্তিক স্থাপন করেন এবং তার নামেই কার্জন হল নামকরণ করা হয় । ভবনটিতে ইউরোপ, মুঘল এবং মুসলিম স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয় । আধুনিক স্থাপত্যবিদ্যা ও মুঘল কাঠামোর সমন্বয়ে এর খিলান ও গম্বুজগুলো। নির্মাণ করা হয়েছে
বড়কাটরা
মুঘল আমলে নির্মিত একটি সরাইখানা হলো বড় কাটরা । এটি সম্রাট সুজা শাহ এর বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল । কিন্তু পরে এটি মুসাফির খানা হিসেবে ব্যবহৃত হয় । বর্তমানে এটি জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
এই ভবনটি মির ই ইমারত নামে পরিচিত দিওয়ান (প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা) কে দিয়ে নির্মাণ করানো হয় ।
এটি ঢাকার চক বাজারে অবস্থিত ।
ছোট কাটরা
এই ভবনটি বড় কাটরার মতো দেখালেও বড় কাটার চেয়ে আকৃতিতে কিছুটা ছোট ছিল । তাই হয়তো ছোট কাটরা নামকরণ করা হয় । এটি শায়েস্তাগারের আমলে নির্মিত হয় এবং ইংরেজ আমলে এর কিছুটা সংস্কার করা হয় ।
খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক লিওনার্দ এখানে প্রথম ১৮১৬ সালে ইংরেজি স্কুল খুলেন।
বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বড় কাটলার পূর্ব দিকে হাকিম হাবিবুর রহমান লেনে এটি অবস্থিত ।
পরিবিবির মাজার
ইরান দুখত রাহমাত বানু, পরিবিবি নামে পরিচিত ছিলেন । তিনি ছিলেন শায়েস্তা খানের কন্যা । ১৮৬৮ সালের ৩ মে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজমের সাথে তার বিয়ে হয় । কিন্তু ১৮৮৪ সালে তার অকাল মৃত্যু হয় ।
শায়েস্তা খান, তার প্রিয় কন্যার স্মরণে এই সুন্দর মাজারটি নির্মাণ করেন।
রোজ গার্ডেন
প্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে পরিচিত রোজ গার্ডেন প্রাসাদ যা রোজ গার্ডেন নামে পরিচিত । দেশী এবং বিদেশী পর্যটকদের কাছে এটি একটি দর্শনীয় স্থান । এটি নাটক ও টেলিফিল্ম শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে ।
এটি ঢাকা শহরের টিকাটুলী এলাকায় অবস্থিত ।
আর্মেনীয় গির্জা
অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে ঢাকায় অনেক আর্মেনীয় ব্যক্তি আসে । ফলে আর্মেনীয় কবরস্থান এবং পরে তার পাশে গির্জা তৈরি হয় । ১৭৮১ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ।
এটি তৈরি করার জন্য আগা মিনাস ক্যাটচিক জমি দান করেন ।
আর্থিক সমস্যার জন্য ১৮৮০ সালে গির্জার ঘণ্টা বাজানো বন্ধ করে দেওয়া হয় । আবার গির্জার বাতিঘরটি ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে বিদ্ধস্ত হয়।
এটি পুরান ঢাকার আর্মানিটোলায় অবস্থিত ।
লালকুঠি / নর্থব্রুক হল
নর্থব্রুক হল যা বর্তমানে স্থানীয়ভাবে লালকুঠি নামে পরিচিত । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অন্যতম প্রাচীন ও সৌন্দর্যময় স্থাপত্যিক একটি নিদর্শন ।
ভারতের গভর্ণর জেনারেল ১৮৭৪ সালে ঢাকা সফরে আসেন। এই সফরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য টাউন হল হিসেবে এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। সেই সময়ের ঢাকার স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এর নাম নর্থব্রুক হল রাখেন ।
আবার এখানে ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মিউনিসিপ্যালিটি ও পিপলস এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা জানিয়ে মানপত্র পাঠ করা হয় । মূল ভবনের পশ্চাৎভাগে একটি গ্রন্থালয় রয়েছে ।
এটি বর্তমানে জরাজীর্ন হয়ে পড়ে রয়েছে । মূল ভবনের পশ্চাৎভাগে একটি গ্রন্থালয় রয়েছে।
এটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ওয়াইজ ঘাটে অবস্থিত ।
ঢাকেশ্বরী মন্দির
ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি মন্দির। এটি ঢাকার আদি ও প্রথম মন্দির।
ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকার আদি ও প্রথম মন্দির । এটি বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে ।
অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন সেই সময়কার নির্মাণশৈলীর সাথে এর স্থাপত্যকলার মিল পাওয়া যায় না ।
মন্দিরে প্রবেশের দ্বরটি নহবতখানা তোরণ নামে পরিচিত । মন্দির প্রাঙ্গণের বাইরে মহানগর পূজা মন্ডপ অবস্থিত ।
ঢাকা শহরের পলাশী ব্যারাক এলাকায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসসমূহের দক্ষিণে ঢাকেশ্বরী মন্দির
অবস্থিত ।
শেষ কথা
আশা করি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
এই রকম আরো আর্টিকেল পড়ার জন্য আমাদের ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।