খুলনা বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় জেলা। এখানে রয়েছে নদী, বন । দেশের সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট এখানেই অবস্থিত। তাই ভ্রমণের জন্য এই জেলার রয়েছে অন্যরকম সুনাম।
আজকে আমরা খুলনার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছু কথা বলব।
এই আর্টিকেল পড়লে আপনিও খুলনার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাবেন।
খুলনার দর্শনীয় স্থান সুন্দরবন
পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং সর্ববৃহৎ রেইনফরেস্ট হলো সুন্দরবন। এটি বাংলাদেশের বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা নিয়ে বিস্তৃত । এটি গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকা ।
সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার । এর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে রয়েছে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার ।
শিরোমনি
খুলনার মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান হলো শিরোমণি । বাংলাদেশ ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও স্বাধীন হয়নি খুলনা । পুরো দেশ স্বাধীন হওয়ার একদিন পরে ১৭ই ডিসেম্বর খুলনা স্বাধীন হয় ।
শিরোমণি কৌশল এর মাধ্যমে যুদ্ধ জয়ের এক অনন্য স্থান । এটি স্থান করে নিয়েছে বিশ্ব ইতিহাসে । এখানে একটি স্মৃতি সৌধও নির্মাণ করা হয়েছে।
গল্লামারী
বেদনাদায়ক গনহত্যার স্মৃতি হলো গল্লামারী । মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি এবং রাজাকারকা অনেক নিরপরাধ মানুষকে এই স্থনে হত্যা করেছে । এটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই ময়ূর নদীর তীরে অবস্থিত ।
গল্লামারী এবং এর আশেপাশে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রায় পাঁচ ট্রাক মানুষের হাড় এবং মাথার খুলি পাওয়া গিয়েছে । এই স্থানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ।
এখানে ১৯৯৫ সালে একটি স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা হয় । বর্তমানে এই স্মৃতিস্তম্ভটি আরো উন্নত করা হচ্ছে ।
বীরশ্রেষ্ঠ সমাধিসৌধ
আমরা সকলেই বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের শহীদ হওয়ার ঘটনাটি শুনেছি । ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করার সময় তিনি শহীদ হন ।
তারই স্মৃতির স্মরণে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার বাঘমারা গ্রামে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে আসতে হবে খুলনার রূপসা উপজেলায় । তারপর সেখান থেকে অটো বা অন্যান্য যানবাহনে করে বাগমারা গ্রামে যেতে পারবেন।
খুলনার দর্শনীয় স্থান সেনহাটি
কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার জন্ম গ্রহণ করেন খুলনার দিঘলিয়া উপলেজার সেনহাটি গ্রামে । তিনি গ্রাম কবি হিসেবে বিশেষ পরিচিত।
তার রচিত ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি’ এবং ‘চিরসুখী জন ভ্রমে কি কখন ব্যথিত বেদন বূঝিতে পারে’ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কবিতা ।
বকুলতলা (জেলা প্রশাসকের বাংলো)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলাসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ ঔপন্যাসিক । তিনি যখন খুলনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন । তখন তিনি এই বাড়িতে অবস্থান করতেন। বকুলতনা বা জেলা প্রশাসকের বাংলো বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর স্মৃতি ধারণ করে আছেন ।
এই বাড়িতে বসেই কবি রচনা করেছিলেন তার প্রথম প্রমের উপন্যাস ‘কপালকুন্ডলা’ । বকুলতলায় অবস্থান ভৈরব নদের তীরে।
রাড়ুলী
আমাদের দেশের একজন জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী হলেন আচার্য্যপ্রফুল্লচন্দ্র রায় । যিনি পি সি রায় নামে অধিক পরিচিত । তিনি ১৮৬১ সালের ২রা আগস্ট খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় রাড়ুলীতে জন্ম গ্রহণ করেন। এটি কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত ।
তিনি একাধারে একজন বিজ্ঞানী,দার্শনিক ও শিল্পী ছিলেন । এছাড়াও তিনি একজন ছিলেন সমাজ সংস্কারক । তিনি গ্রামের মানুষের অর্থনীতিক উন্নতির জন্য সমবায় ব্যাংক পদ্ধতি চালু করেন ।
এছাড়াও তিনি কো অপারেটিভ ব্যাংক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন।
পিঠাভোগ
খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার পিঠাভোগ গ্রামে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পূর্ব পুরুষের নিবাস ছিল । প্রত্নতাত্বিক অধিদফতর এর সমীক্ষায় এখানে রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের ভিটার ভিত্তিপ্রস্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে ।
প্রতি বছর এখানে রবীন্দ্র জন্ম বার্ষিকী পালন করা হয় । এটি খুলনা জেলার রূপসা তে অবস্থিত।
খুলনার দর্শনীয় স্থান দক্ষিণডিহি
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুণ্য স্মৃতি
খুলনা শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলে দক্ষিণ ডিহিগ্রাম । এই গ্রামে একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে । যেটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি ।
এটি রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত স্থান । এই গ্রামটি ফুল, ফল এবং অন্যান্য নানা রকমের গাছ দিয়ে ভরা ।
রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর বাড়ি যেতে হলে খুলনা থেকে ফুলতলা উপজেলায় আসতে হবে । সেখান থেকে সহজেই রবীন্দ্রনাথের শ্বশুর বাড়ি যাওয়া যায় ।
শেষ কথা
আশাকরি আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি খুলনার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন।
এই রকম ভ্রমণ বিষয়ক আর্টিকেল পড়তে আমাদের এই ব্লগটি ঘুরে দেখতে পারেন।