আসসালামু আলাইকুম আশা করি ভাল আছেন । আজকে আমাদের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জানব ।
বাংলাদেশের অন্যতম পার্বত্য অঞ্চল হল খাগড়াছড়ি । আর আমরা জানি পার্বত্য অঞ্চল মানে দর্শনীয় স্থান দিয়ে পরিপূর্ণ ।
পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন পাহাড় এর মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি করেছে ঝর্ণা , ক্যাসকেড ইত্যাদি । আবার পাহাড় গুলোর মাঝে পাহাড়িরা চুম চাষ করে । এছাড়াও এগুলো অঞ্চলে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের দর্শনীয় স্থান
।
আসুন খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানি ।
খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান সমূহ
আলুটিলা গুহা
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে অবস্থিত আলুটিলা গুহা একটি প্রাকৃতিক গুহা । স্থানীয়দের কাছে এটি মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা নামে পরিচিত। এছাড়াও এটি একটি রহস্যময় গুহা ।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে আলুটিলা বা আরবারী পাহাড়ে আলুটিলা গুহা অবস্থিত । সমুদ্র পৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ৩০০০ ফুট । এটি খুবই জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র।
এই গুহার ভেতর খুবই অন্ধকার এবং ঠান্ডা । এর ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে না । গুহাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট, এটি অনেকটা ভূ-গর্ভস্থ টানেলের মত দেখতে । গুহার এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে অপর দিক দিয়ে বের হতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগে ।
রিছাং ঝর্ণা
খাগড়াছড়ি জেলায় মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা গ্রামে রিছাং ঝর্ণা অবস্থিত । এটি সাপ মারা রিসাং ঝর্ণা নামেও পরিচিত ।এটি একটি পাহাড়ি ঝর্ণা ।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং এর উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট । এর মূল আকর্ষন হলো ঢালু প্রাকৃতিক ওয়াটার স্লাইডিং ।
ঝরর্ণায় যাওয়ার পথে পাহাড়ি ঢালু রাস্তা , সিঁড়ি এবং চারদিকের সবুজ ঝোপঝাড় বেশ আকর্ষণীয় ।
দেবতার পুকুর
খাগড়াছড়ির মাইসছড়ি এলাকায় নুনছড়ি মৌজায় অবস্থিত একটি বৃহৎ হ্রদ হলো দেবতার পুকুর । এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭০০ ফুট উপরে এবং ৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
কথিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের পানির তৃঞ্চা নিবারণের জন্য জল দেবতা নিজে এই পুকুর খনন করেন ।
হর্টিকালচার পার্ক
হর্টিকালচার পার্ক খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থিত খুব জনপ্রিয় একটি পার্ক ।
এটি খাগড়াছড়ির জিরোমাইল এলাকায় অবস্থিত । ২২ একর পাহাড়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে ।
এর ভিতরে রয়েছে একটি সুইমিং পুল এবং খুবই সুন্দর একটি ঝুলন্ত ব্রিজ । এই পার্ক থেকে খাগড়াছড়ির খুবই সুন্দর ভিউ দেখা যায় । এগুলো ছাড়াও এখানে আরও রয়েছে ফুলের বাগান এবং বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের কাজ, টয় ট্রেন, দোলনা, ওয়াচ টাওয়ার ।
বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জন্য এর চেয়ে ভালো কোন জায়গা কমই রয়েছে ।
তৈদুছড়া ঝর্ণা
খাগড়াছড়ি থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে দীঘিনালা উপজেলার জঙ্গলের মাঝে আঁকাবাঁকা পাহাড়ের ভাঁজ দিয়ে বয়ে চলছে তৈদুছড়া ঝর্ণা। ত্রিপুরা ভাষায় তৈদু শব্দের অর্থ পানির দরজা এবং ছড়া শব্দের অর্থ ঝর্ণা ।
১০০ ফুট উচু ঝর্ণার মুখ থেকে বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ ও শীতল পানির বয়ে চলার শব্দে মুখরিত হয়ে থাকে তৈদুপাড়া এলাকা ।
বিডিআর স্মৃতিসৌধ
বাংলাদেশ রাইফেলস্ বা বিডিআর । দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৩রা মার্চ ইপিআর( ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ) এর নতুন নামকরণ করা হয় বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস ) ।
খাগড়াছড়ির রামগড়ে বাংলাদেশ রাইফেলস্ এর জন্ম উপলক্ষে একটি মনোরম স্মৃতিফলক রয়েছে। যেখানে BDR এর ধারাবাহিক ইতিহাস দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে ।
মায়াবিনী লেক
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ভাই-বোন ছড়ার কংচাইরি পাড়ায় পাহাড়ে অসাধারণ সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র মায়াবিনী লেক ।
উঁচু-নিচু ৪০ একর পাহাড়ি জায়গায় ১৫ একর লেকের মাঝখানে দ্বীপের মতো গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্রটি । শীতল স্বচ্ছ পানি, স্বচ্ছ পানিতে ভেসে বেড়ায় মাছ ।
শান্তিপুর অরণ্য কুঠির
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার একটি বৌদ্ধবিহার ও পর্যটন স্থান হলো শান্তিপুর অরণ্য কুঠির । অনেক বড় এলাকাজুড়ে অরণ্যে আবৃত বলেই এর নামকরণ করা হয়েছে অরণ্য কুটির ।
ভিক্ষুরা নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশে ধ্যান সাধনার জন্য এই কুটিরটি ব্যবহার করেন বলে জনশ্রুতি আছে।
এটি প্রধানত একটি বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরটির সবচেয়ে প্রধান আকর্ষণ হল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তিটি এখানে রয়েছে ।
শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপনাগুলোর মধ্যে ৪৮.৫ ফুট উচ্চতার গৌতম বুদ্ধের মূর্তি, লাভীশ্রেষ্ঠ সিবলী মহাস্থবিরের মন্দির, মারবিজয়ী উপগুপ্ত মহাস্থবিরের মূর্তি, অধ্যক্ষ মহোদয়ের আবাসস্থল; যায় নাম মৈত্রী ভবন , একশত হাত দৈর্ঘ্যে বিশিষ্ট ভিক্ষুশালা, ৮০ হাত দৈর্ঘ্যএর ভোজনশালা এবং বড় বুদ্ধ মূর্তির ছাদ ।
নিউজিল্যান্ড পাড়া
খাগড়াছড়ির পানখাইয়া পাড়ায় নিউজিল্যান্ড পাড়া অবস্থিত । যা খাগড়াছড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে পাশেই অবস্থিত ।
যদিও এই নামকরণের পেছনে তেমন কোনো কারণ নেই। পানখাইয়া পাড়া থেকে পেরাছড়া গ্রামের দিকে যাওয়ার রাস্তাটা হলো নিউজিল্যান্ড সড়ক। এ সড়কের দুই পাশে আছে দিগন্ত জোড়া সবুজ ক্ষেত ।
হাতিমাথা
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নের একটি পাহাড়ি পথকে মায়ুং কপাল বা হাতিমুড়া নামে ডাকা হয়।
স্থানীয় মানুষদের কাছে এটি হাতিমাথা নামে খ্যাত । এদো সিরে মোন এই স্থানের চাকমা নাম । আবার অনেকে এটিকে স্বর্গের সিড়ি হিসাবেও ডাকে ।
দুর্গম এই পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ১৫ গ্রামের বাসিন্দা চলাচল করে । গ্রামবাসীর চলাচলকে সুবিধাজনক করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড হাতিমাথা পাহাড়ে ৩০৮ ফুট লম্বা লোহার সিঁড়ি তৈরি করেছে ।
মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী
খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার মহামূনি নামক স্থানে মং রাজবাড়ি অবস্থিত ।
এক একটি ঐতিহাসিক রাজবাড়ি । এটি চট্টগ্রামের পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একটু স্বায়ত্তশাসিত রাজবংশ ছিল ।
মাতাই পুখিরি
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলার নুনছড়ি মৌজায় মাতাই পুখিরি ।
মাতাই শব্দের অর্থ ডেবিট এবং পুখুরি শব্দের অর্থ পুকুর । বাংলা ভাষী এবং পর্যটকদের কাছে এই হ্রদটি দেবতার পুকুর নামে পরিচিত ।
এটি সমুদ্র পৃষ্ট থেকে প্রায় ৭০০ ফুট উপরে অবস্থিত এবং প্রায় সাড়ে ৫ একর জায়গা জুড়ে বিদ্যমান ।
শেষ কথা
আশাকরি আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন।
এই রকম নতুন নতুন আর্টিকেল পড়তে আমাদের এই ব্লগটি ঘুরে দেখতে পারেন।
1 thought on “খাগড়াছড়ি দর্শনীয় স্থান | Tourist spots in khagrachari”